সরস্বতী পূজা-পুষ্পাঞ্জলী মন্ত্র, প্রণাম মন্ত্র, স্তব ও প্রার্থনা মন্ত্রঃ
সরস্বতী পূজা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের একটি অন্যতম প্রচলিত পূজা। সরস্বতী দেবীকে শিক্ষা, সংগীত ও শিল্পকলার দেবী ও আশীর্বাদাত্রী মনে করা হয়। বাংলা মাঘ মাসের ৫মী তিথিতে এই পূজা অনুষ্ঠিত হয়। শিক্ষা, সংগীত ও শিল্পকলায় সফলতার আশায় শিক্ষার্থীরা দেবীর পূজা করে থাকে।
বাকদেবী, বিরাজ, সারদা, ব্রাহ্মী, শতরূপা, মহাশ্বেতা, পৃথুধর, বকেশ্বরী সহ আরো অনেক নামেই দেবী ভক্তের হৃদয়ে বিরাক করে।
পুরাণ অনুযায়ী দেবী সরস্বতী ব্রহ্মের মুখ থেকে উথ্থান। দেবীর সকল সৌন্দর্য্য ও দীপ্তির উৎস মূলত ব্রহ্মা। পঞ্চ মস্তকধারী দেবী ব্রহ্মা এক স্বকীয় নিদর্শন।
পূজার জন্য দেবী সরস্বতীর মূর্তি শ্বেত বস্র পরিধান করে থাকে যা পবিত্রতার নিদর্শন। দেবীর আসন কে পুষ্পশোভামন্ডিত করে রাখা হয়। পরিবারের সকল সদস্য খুব ভোরে স্নান শেষে পরিস্কার বস্র পরিধান করে দেবীর সামনে অবস্থান করে থাকে। পুরোহিত পূজা শুরু করবার আগ পর্যন্ত দেবীর মুখমন্ডল ঢাকা থাকে। পূজার অর্ঘ্যর পাশাপাশি দেবীর পূজার অারেকটি প্রধান অংশ ছাত্রছাত্রীদের পাঠ্যপুস্তক। সরস্বতী পূজার একটি বিশেষ অর্য্য হল পলাশ ফুল। দেবীর অঞ্জলীর জন্য এটি একটি অত্যবশ্যকীয় উপাদান।
পুষ্পাঞ্জলী মন্ত্র
=================
ওঁ জয় জয় দেবী চরাচর সারে, কুচযুগশোভিত মুক্তাহারে।
বীনারঞ্জিত পুস্তক হস্তে, ভগবতী ভারতী দেবী নমহস্তুতে।।
নমঃভদ্রকাল্যৈ নমো নিত্যং সরস্বত্যৈ নমো নমঃ।
বেদ-বেদাঙ্গ-বেদান্ত-বিদ্যা-স্থানেভ্য এব চ।।
এস স-চন্দন পুষ্পবিল্ব পত্রাঞ্জলি সরস্বতৈ নমঃ।।
প্রনাম মন্ত্র
=======
নমো সরস্বতী মহাভাগে বিদ্যে কমললোচনে।
বিশ্বরূপে বিশালাক্ষ্মী বিদ্যাংদেহি নমোহস্তুতে।।
জয় জয় দেবী চরাচর সারে, কুচযুগশোভিত মুক্তাহারে।
বীনারঞ্জিত পুস্তক হস্তে, ভগবতী ভারতী দেবী নমহস্তুতে।।
সরস্বতীর স্তব
=======
শ্বেতপদ্মাসনা দেবী শ্বেত পুষ্পোপশোভিতা।
শ্বেতাম্ভরধরা নিত্যা শ্বেতাগন্ধানুলেপনা।।
শ্বেতাক্ষসূত্রহস্তা চ শ্বেতচন্দনচর্চ্চিতা।
শ্বেতবীণাধরা শুভ্রা শ্বেতালঙ্কারবভূষিতা
বন্দিতা সিদ্ধগন্ধর্ব্বৈর্চ্চিতা দেবদানবৈঃ।
পূঝিতা মুনিভি: সর্ব্বৈঋষিভিঃ স্তূয়তে সদা।।
স্তোত্রেণানেন তাং দেবীং জগদ্ধাত্রীং সরস্বতীম্।
যে স্মরতি ত্রিসন্ধ্যায়ং সর্ব্বাং বিদ্যাং লভন্তি তে।।
সরস্বতী ও নীল সরস্বতী পূজার মন্ত্র ও জপ কবচম্
মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথি। এই শুভ দিনে আমরা বিদ্যার অধিষ্টাত্রী দেবী সরস্বতীর বন্দনা করি। তিনি আমাদের বিদ্যা ও জ্ঞাণ প্রদান করেন।
যাদের বিদ্যায় বার বার বাধা আসছে অথবা যারা বিশেষ স্থানাধীকার করতে আগ্রহী তারা এই শুভ দিনে সরস্বতীপূজার সাথে সাথে "নীল সরস্বতী"র আরাধনা করতে পারেন। "নীল সরস্বতীর কবচ" এবং চারমুখী রুদ্রাক্ষ ও ধারণ করতে পারেন। অথবা "সরস্বতী যন্ত্র" বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করতে পারেন।
সকালে স্নান সেরে সাদা বস্ত্র পরে এইভাবে ক্রম অনুযায়ী আরাধনা করতে হবে।
সরস্বতীর বন্দনাঃ
যা কুন্দেনু তুষার হার ধবলা যা শুভ্রবস্ত্রাবৃতা
যা বীণা বরদণ্ডমণ্ডিত করা যা শ্বেত পদ্মাসনা।
যা ব্রহ্মাচ্যুতশংকর প্রভৃতির্দেবৈঃ সদাবন্দিতা
সা মাং পাতুসরস্বতী ভগবতী নিঃশেষ জাড্যাপহাম্॥১॥
শুক্লাং ব্রহ্ম বিচার সার পরমাদ্যাং জগদ্ব্যাপিনীম্
বীণা পুষ্পক ধারিণীমভয়দাম্ জাড্যান্ধকারাপহাম।
হস্তে স্ফটিক মালিকাম্ বিদধতীম্ পদ্মাসনে সংস্থিতাম্
বন্দে ত্বাং পরমেশ্বরীম্ ভগবতীম্ বুদ্ধিপ্রদাম্ সারদাম্॥২॥
সরস্বতীর ধ্যানঃ
ওঁ সরস্বতী ময়া দৃষ্টবা, বীণা পুস্তক ধারণীম্।
হংস বাহিনী সমাযুক্তা মা বিদ্যা দান করেতু মে ওঁ।।
সরস্বতীর ধ্যান
…………………………
তরুণশকলমিন্দোর্বিভ্রতী শুভ্রকান্তিঃ
কুচভরনমিতাঙ্গী সন্নিষন্না সিতাব্জে ।
নিজকরকমলোদ্যল্লেখনীপুস্তকশ্রীঃ
সকলবিভবসিন্ধ্যৈ পাতু বাগদেবতা নঃ ।।
এর অর্থ- চন্দ্রের তরুণ অংশের ন্যায় যাঁর কান্তি শুভ্র, যিনি কুচভরে অবনতাঙ্গী, যিনি শ্বেত পদ্মাস্থনা , যাঁর নিজ কর কমলে উদ্যত লেখনী ও পুস্তক শোভিত , সকল ঐশ্বর্য সিদ্ধির নিমিত্ত সেই বাগদেবী আমাদিগকে রক্ষা করুন ।
সরস্বতীর জপ মন্ত্রঃ
ওঁ বদ্ বদ্ বাগ্বাদিনি স্বাহা।
সরস্বতীর প্রনাম
……………………………
সরস্বতী মহাভাগে বিদ্যে কমললোচনে।
বিশ্বরূপে বিশালাক্ষ্মী বিদ্যাংদেহি নমোহস্তুতে।।
অঞ্জলিঃ
ভদ্রকাল্যৈ নমো নিত্যং সরস্বত্যৈ নমো নমঃ ।
বেদ –বেদাঙ্গ বেদান্তবিদ্যাস্থানেভ্য এব চ ।।
জয় জয় দেবী চরাচর সারে, কুচযুগশোভিত মুক্তাহারে।
বীনারঞ্জিত পুস্তক হস্তে, ভগবতী ভারতী দেবী নমহস্তুতে।।
এর অর্থ- সরস্বতী দেবী মহাভাগ, কমলের ন্যায় লোচনা দেবী , বিশালাক্ষী বিদ্যা দায়িনী দেবীকে নমস্কার । ভদ্রকালিকে ( মঙ্গলময়ী ভগবতী ) কে নিত্য নমস্কার , দেবী সরস্বতীকে পুনঃ পুনঃ নমস্কার এবং বেদ বেদাঙ্গ বিদ্যা স্থানকে নমস্কার । কুচ যুগ শোভিতা মুক্তাহার পরিহিতা যিনি বীনা পুস্তক ধারন করে থাকেন সেই ভগবতী ভারতী কে নমস্কার ।
বেদে সরস্বতী নদী জ্যোতিরূপে বর্ণনা করা হয়েছে। সরস্বতী নদীর তীরে বসে যে বৈদিক মন্ত্র উচ্চারিত হোতো- সেটা লেখা আছে । বেদের সরস্বতীর ত্রয়ী মূর্তি। ভূঃ বা ভূলোকে ইলা, ভুবঃ বা অন্তরীক্ষে লোক সরস্বতী, এবং স্বর্ বা স্বর্গলোকে ভারতী। ভূ র্ভুবঃ স্বঃ – এই তিনে মিলে সামগ্রিক জগত । ভূলোকে অগ্নি, অন্তরীক্ষ লোকে হিরণ্য দ্যুতি ইন্দ্র এবং স্ব- লোকে সূর্য – এই তিনের যে জ্যোতি রাশি – তাঁহা সরস্বতীর জ্যোতি। জ্ঞানময়ী বা চিন্ময়ী রূপে তিনি সর্বত্র , সর্ব ব্যাপিনী। তাঁর জ্যোতি সর্বত্র পরিব্যাপ্ত । শুধু এই ত্রিলোক নয় ঊর্ধ্ব সপ্ত লোক নিম্ন সপ্ত লোক পর্যন্ত চতুর্দশ ভুবনে স্তরে স্তরে সেই জ্যোতি বিরাজিতা। সেই জ্যোতি অজ্ঞান রূপী তমসা কে নিবারন করে। যোগী হৃদয়ে যখন সেই আলো জ্বলে – তখন সকল প্রকার অন্ধকার নাশ হয়।
0 মন্তব্যসমূহ