শ্রী শ্রী মা সরস্বতী


 

শ্রী শ্রী সরস্বতীর প্রণাম মন্ত্রঃ

জয় জয় দেবী চরাচরসারে কুচযুগশোভিত মুক্তাহারে।

বীণাপুস্তক রঞ্জিত হস্তে ভগবতি ভারতী দেবীনমস্তে।।

       সরস্বতী মহাভাগে বিদ্যে কমললোচনে ।

বিশ্বরূপে বিশালাক্ষি বিদ্যাং দেহি নমোহস্ত্ত তে ॥

সরস্বতী শব্দটি সার এবং 'স্ব' দুটি শব্দের সমন্বয়ে গঠিত। সেই অনুসারে সরস্বতী শব্দের অর্থ, যিনি কারাে মধ্যে সারজ্ঞান প্রকাশ করেন। আবার সরস্বতী শব্দটি সংস্কৃত সুরস বতি' শব্দ থেকে এসেছে, যার অর্থ হচ্ছে জলের আধার। সরস্বতী সাক্ষাৎ দেবী মূর্তি এবং নদী দুইরূপেই প্রকটিত।

ঋগবেদে (২/৪১/১৬) বর্ণনা করা হয়েছে অম্বিতমে নদীতমে দেবীতমে সরস্বতী। অপ্রশস্তা ইব স্মসি প্রশক্তিমন্ব নস্কৃধি ॥

অর্থাৎ মাতৃগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ, নদীগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ, দেবীগণের মধ্যে
শ্রেষ্ঠ হে সরস্বতী, আমরা অসমৃদ্ধের ন্যায় রয়েছি, আমাদের সমৃদ্ধশালী করাে। সরস্বতী দেবী জ্ঞান, সঙ্গীত, কলা এবং বিদ্যার দেবী।
 
সরস্বতী দেবী কীভাবে দেবী, মাতা ও নদীশ্রেষ্ঠ?
বেদে সরস্বতী সম্বন্ধে তিনটি সম্বোধন করা হয়েছে, “দেবীতমে”, “অম্বিতমে” ও “নদীতমে”। দেবী তমার অর্থ দেবীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ, অম্বিতমার অর্থ সকল মায়েদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এবং নদীতমার অর্থ সকল নদীর মধ্যে শ্রেষ্ঠ। এদিক থেকে তাঁর মহিমা ত্রিবিধ-তিনি দেবী, তিনি মা, তিনি নদীরূপা। সকল দ্যোতনশীল (প্রকাশমান) বস্তুর মধ্যে ইনি শ্রেষ্ঠ, ইনি দিব্য ব্রহ্মজ্যোতিঃ স্বরূপিণী, তাই ইনি দেবীতমা, জ্ঞানরূপ পরম পীযূষদানে আমাদের মতাে অবােধ, অজ্ঞান, অসহায় সন্তানকে নিত্য প্রতিপালন করেন, হাত ধরে আমাদিগকে তমসা থেকে আলােকদীপ্ত পথে যেতে শিক্ষা দেন, জননীর (মায়ের) ন্যায় আমাদের মূক (বােকা) কণ্ঠে ভাষা ফুটিয়ে তােলেন তিনিই, তাই তিনি অস্বিতমা বা মাতৃশ্রেষ্ঠা। সন্তানের প্রতি বিগলিত বাত্সল্যে (মাতৃসুলভ ভালবাসায়)
ইনিই পুনরায় জলময়ী এবং ইনিই স্থল সূক্ষ্মাদি সকল নাদের উৎসভূমি। রূপে নিত্য নাদময়ী তথা শৃঙ্গার করুণ বীর শাস্তাদি নব রসাতমক বাক্যের ছন্দে ও অলঙ্কারে পরম রসময়ী কাব্য কলনাদিণী, তাই রসতমা সরস্বতী নদীতমা বা নদীশ্রেষ্ঠ।
 
সরস্বতী দেবীর আবির্ভাব,
ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ অনুযায়ী, গােলােকে শ্রীকৃষ্ণের কণ্ঠদেশ থেকে দেবী সরস্বতী উদ্ভূতা হয়েছিলেন।
চৈতন্য ভাগবত আদিলীলা ২.৯-১৪ তে। বর্ণনা করা হয়েছে
পূর্বে ব্রহ্মা জন্মিলেন নাভিপদ্ম হৈতে।। তথাপিও শক্তি নাই কিছুই দেখিতে ॥
তবে যবে সর্বভাবে লইলা শরণ, তবে প্রভু কৃপায় দিলেন দরশন ॥ তবে কৃষ্ণ কৃপায় স্কুরিল সরস্বতী। তবে সে জানিলা সর্ব অবতার স্থিতি ॥
এক সময় শ্রীব্রহ্মা সৃষ্টিকার্যের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন। শান্তভাবে ধ্যান আছেন। কী করবেন, কী করা উচিত চিন্তা করছেন। এমন সময় তাঁর শরীর থেকে এক সুন্দরী দেবীমূর্তি প্রকাশিত হয়। দেবী ব্রহ্মাজীকে বললেন, “হে বিধাতা আমি আপনার থেকেই প্রকাশিত হলাম। এখন দয়া করে আপনি আমার স্থান এবং আমার কী কর্ম তা নির্দেশ করুন।" ব্রহ্মা বললেন, “তােমার নাম সরস্বতী। তুমি অবস্থান করাে সকলের জিহ্বাতে, বিশেষভাবে সুশিক্ষিত ব্যক্তিদের জিহ্বাতে তুমি নৃত্য করাে। পৃথিবীতে তুমি একটি নদীরূপে প্রকাশিত হও।” দেবী সরস্বতী প্রশ্ন করলেন- হে বিধাতা, আপনি বললেন, আমি সবার জিহ্বাতে অবস্থান করবাে; আবার বললেন, সুশিক্ষিত ব্যক্তিদের জিহ্বাতে অবস্থান করবাে; আবার বললেন, নদীরূপে থাকবাে। এর ব্যাখ্যা কী? ব্রহ্মা বললেন, সরস্বতী তুমি যখন লােকের জিহ্বাতে অবস্থান করবে, তখন লােকের জিহ্বা থেকে বাকশক্তি হবে। তাই তোমার নাম বাকদেবী। তুমি আমার মুখ থেকেই প্রকাশিত। তুমি পবিত্রবতী। জগৎ-সংসারে বহু অপবিত্র মানসিকতা সম্পন্ন জীব থাকবে, অপবিত্র মানুষের জিহ্বায় কদর্য বাক্য স্ফুরিত হবে, সেসব জিহ্বাতে তুমি অবস্থান করে সুখি হতে পারবে না। 

হে সরস্বতী, তুমি সাক্ষাৎ বুদ্ধি স্বরূপিণী। তুমি বলো, কোথায় তুমি আনন্দ লাভ করবে? সরস্বতী বললেন-যে সমস্ত ব্যক্তি পরম সুন্দর পরমেশ্বর ভগবানের আরাধনা করেন, তাদের জিহ্বায় সর্বদা পরম প্রভুর নাম কীর্তিত হবে। আমি তাঁদের পবিত্র জিহ্বায় অধিষ্ঠান করবো। 


ব্রহ্মাজী ব্রহ্মসংহিতায় বর্ণনা করেছেন-সেই পরম সুন্দর ভগবান কে? তিনি বর্ণনা করেছেন, “সেই পরমেশ্বর ভগবান হচ্ছেন শ্রীকৃষ্ণ। তাঁর রূপ সচ্চিদানন্দ। তিনি অনাদির আদি এবং সর্বকারণের পরম কারণ। সেই আদি এবং সর্বকারণের পরম কারণ। সেই আদি পুরুষ গোবিন্দকে আমি ভজনা করি।” কলিসন্তরণ উপনিষদে বর্ণনা করা হয়েছে- 
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে। 
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।।
ইত ষোড়শকং নাম্নাং কলিকল্মাষ নাশনম্। 
নাতো পরতর উপায় সর্ববেদেষু দৃশ্যতে।। 
শ্রীমদ্ভাগবতে (১১/৫/৩২) বর্ণনা করা হয়েছে- 
কৃষ্ণবর্ণ তিষাকৃষ্রং সাঙ্গোপাঙ্গোঅস্ত্রপার্ষদম্। 
যজ্ঞৈঃ সঙ্কীর্তনপ্রায়ৈর্যজন্ত হি সুমেধসঃ।।
 
কলিযুগে সুমেধাসম্পন্ন মানুষেরা কৃষ্ণনাম কীর্তনের দ্বারা শ্রীকৃষ্ণের আরাধনা করেন।
 
আমরা সরস্বতী পূজার আগে কুল বা বরই খাই না কেন???
 
সরস্বতী দেবীকে তুষ্ট করার জন্য মহামুনি ব্যাসদেব বদরিকাশ্রমে তপস্য করেছিল। তপস্যা শুরুর পূর্বে তার তপস্য স্থলের কাছে একটি কুল বা বরই বিচি/বীজ রেখে সর্ত দেয়া হলো, এই কুলবীজ অংকুরিত হয়ে চারা, চারা থেকে বড় গাছ, বড় গাছে ফুল থেকে নতুন কুল হবে। যেদিন সেই কুল পেকে ব্যাসদেবের মাথায় পতিত হবে, সেই দিন তার তপস্য পূর্ণ হবে বা সরস্বতী দেবীকে তুষ্ট হবে। ব্যাসদেবও সেই সর্ত মেনে নিয়ে তপস্যা শুরু করলেন। ধীরে ধীরে বেশ কয়েক বছর এই কুলবীজ অংকুরিত হয়ে চারা, চারা থেকে বড় গাছ, বড় গাছে ফুল থেকে নতুন কুল হয় এবং একদিন তা পেকে ব্যাসদেবের মাথায় পতিত হয়, তখন ব্যাসদেব বুঝতে পারে যে, সরস্বতী দেবী তার প্রতি তুষ্ট হয়েছেন ( কুল বা বরই এর আর এক নাম বদ্রী, তপস্যার সাথে বদ্রী এর সম্পর্ক থাকায় ঐ জায়গার নাম বদরিকাশ্রম নামে প্রচার হয়ে যায়)। দিনটি ছিল শ্রীপঞ্চমীর দিন। সেদিন বেদমাতা সরস্বতী কে বদ্রী/কুল ফল নিবেদন করে অর্চণা করে তিনি ব্রহ্মসূত্র রচনা আরম্ভ করেন। শ্রীপঞ্চমীর দিন সরস্বতী দেবী তুষ্ট হয়েছিলেন। তাই সেই দিনের আগে আমরা কুল ভক্ষণ করি না। শ্রীপঞ্চমীর দিন সরস্বতী দেবীকে কুল নিবেদন করার পরেই কুল ভক্ষণ করি।.... স্খাস্থ্যগত কারণেও সরস্বতী পূজার আগে কুল খাওয়া ঠিক না। কারণ মাঘ মাসের মাঝামাঝি সময়ের আগে কুল কাচা বা কশযুক্ত থাকে। কাচা বা কশযুক্ত কুল থেলে শরীরের ক্ষতি হতে পারে। ....হাজার হাজার বছর পূর্বে আমার ধর্ম যা বলে গেছে, আজ বিজ্ঞান গবেষনা করে তার সত্যতা পাচ্ছে।... জয় হোক সনাতন ধর্মের।
 
সরস্বতী পূজা-পুষ্পাঞ্জলী মন্ত্র, প্রণাম মন্ত্র, স্তব ও প্রার্থনা মন্ত্রঃ
সরস্বতী পূজা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের একটি অন্যতম প্রচলিত পূজা। সরস্বতী দেবীকে শিক্ষা, সংগীত ও শিল্পকলার দেবী ও আশীর্বাদাত্রী মনে করা হয়। বাংলা মাঘ মাসের ৫মী তিথিতে এই পূজা অনুষ্ঠিত হয়। শিক্ষা, সংগীত ও শিল্পকলায় সফলতার আশায় শিক্ষার্থীরা দেবীর পূজা করে থাকে।
বাকদেবী, বিরাজ, সারদা, ব্রাহ্মী, শতরূপা, মহাশ্বেতা, পৃথুধর, বকেশ্বরী সহ আরো অনেক নামেই দেবী ভক্তের হৃদয়ে বিরাক করে।
পুরাণ অনুযায়ী দেবী সরস্বতী ব্রহ্মের মুখ থেকে উথ্থান। দেবীর সকল সৌন্দর্য্য ও দীপ্তির উৎস মূলত ব্রহ্মা। পঞ্চ মস্তকধারী দেবী ব্রহ্মা এক স্বকীয় নিদর্শন।
পূজার জন্য দেবী সরস্বতীর মূর্তি শ্বেত বস্র পরিধান করে থাকে যা পবিত্রতার নিদর্শন। দেবীর আসন কে পুষ্পশোভামন্ডিত করে রাখা হয়। পরিবারের সকল সদস্য খুব ভোরে স্নান শেষে পরিস্কার বস্র পরিধান করে দেবীর সামনে অবস্থান করে থাকে। পুরোহিত পূজা শুরু করবার আগ পর্যন্ত দেবীর মুখমন্ডল ঢাকা থাকে। পূজার অর্ঘ্যর পাশাপাশি দেবীর পূজার অারেকটি প্রধান অংশ ছাত্রছাত্রীদের পাঠ্যপুস্তক। সরস্বতী পূজার একটি বিশেষ অর্য্য হল পলাশ ফুল। দেবীর অঞ্জলীর জন্য এটি একটি অত্যবশ্যকীয় উপাদান।
পুষ্পাঞ্জলী মন্ত্র
=================
ওঁ জয় জয় দেবী চরাচর সারে, কুচযুগশোভিত মুক্তাহারে।
বীনারঞ্জিত পুস্তক হস্তে, ভগবতী ভারতী দেবী নমহস্তুতে।।
নমঃভদ্রকাল্যৈ নমো নিত্যং সরস্বত্যৈ নমো নমঃ।
বেদ-বেদাঙ্গ-বেদান্ত-বিদ্যা-স্থানেভ্য এব চ।।
এস স-চন্দন পুষ্পবিল্ব পত্রাঞ্জলি সরস্বতৈ নমঃ।।
 
প্রনাম মন্ত্র
=======
নমো সরস্বতী মহাভাগে বিদ্যে কমললোচনে।
বিশ্বরূপে বিশালাক্ষ্মী বিদ্যাংদেহি নমোহস্তুতে।।
জয় জয় দেবী চরাচর সারে, কুচযুগশোভিত মুক্তাহারে।
বীনারঞ্জিত পুস্তক হস্তে, ভগবতী ভারতী দেবী নমহস্তুতে।।
 
সরস্বতীর স্তব
=======
শ্বেতপদ্মাসনা দেবী শ্বেত পুষ্পোপশোভিতা।
শ্বেতাম্ভরধরা নিত্যা শ্বেতাগন্ধানুলেপনা।।
শ্বেতাক্ষসূত্রহস্তা চ শ্বেতচন্দনচর্চ্চিতা।
শ্বেতবীণাধরা শুভ্রা শ্বেতালঙ্কারব‌ভূষিতা
বন্দিতা সিদ্ধগন্ধর্ব্বৈর্চ্চিতা দেবদানবৈঃ।
পূঝিতা মুনিভি: সর্ব্বৈঋষিভিঃ স্তূয়তে সদা।।
স্তোত্রেণানেন তাং দেবীং জগদ্ধাত্রীং সরস্বতীম্।
যে স্মরতি ত্রিসন্ধ্যায়ং সর্ব্বাং বিদ্যাং লভন্তি তে।।
সরস্বতী ও নীল সরস্বতী পূজার মন্ত্র ও জপ কবচম্
মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথি। এই শুভ দিনে আমরা বিদ্যার অধিষ্টাত্রী দেবী সরস্বতীর বন্দনা করি। তিনি আমাদের বিদ্যা ও জ্ঞাণ প্রদান করেন।
যাদের বিদ্যায় বার বার বাধা আসছে অথবা যারা বিশেষ স্থানাধীকার করতে আগ্রহী তারা এই শুভ দিনে সরস্বতীপূজার সাথে সাথে "নীল সরস্বতী"র আরাধনা করতে পারেন। "নীল সরস্বতীর কবচ" এবং চারমুখী রুদ্রাক্ষ ও ধারণ করতে পারেন। অথবা "সরস্বতী যন্ত্র" বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করতে পারেন।
সকালে স্নান সেরে সাদা বস্ত্র পরে এইভাবে ক্রম অনুযায়ী আরাধনা করতে হবে।
সরস্বতীর বন্দনাঃ
যা কুন্দেনু তুষার হার ধবলা যা শুভ্রবস্ত্রাবৃতা
যা বীণা বরদণ্ডমণ্ডিত করা যা শ্বেত পদ্মাসনা।
যা ব্রহ্মাচ্যুতশংকর প্রভৃতির্দেবৈঃ সদাবন্দিতা
সা মাং পাতুসরস্বতী ভগবতী নিঃশেষ জাড্যাপহাম্॥১॥
শুক্লাং ব্রহ্ম বিচার সার পরমাদ্যাং জগদ্ব্যাপিনীম্
বীণা পুষ্পক ধারিণীমভয়দাম্ জাড্যান্ধকারাপহাম।
হস্তে স্ফটিক মালিকাম্ বিদধতীম্ পদ্মাসনে সংস্থিতাম্
বন্দে ত্বাং পরমেশ্বরীম্ ভগবতীম্ বুদ্ধিপ্রদাম্ সারদাম্॥২॥
সরস্বতীর ধ্যানঃ
ওঁ সরস্বতী ময়া দৃষ্টবা, বীণা পুস্তক ধারণীম্।
হংস বাহিনী সমাযুক্তা মা বিদ্যা দান করেতু মে ওঁ।।
 
সরস্বতীর ধ্যান
…………………………
তরুণশকলমিন্দোর্বিভ্রতী শুভ্রকান্তিঃ
কুচভরনমিতাঙ্গী সন্নিষন্না সিতাব্জে ।
নিজকরকমলোদ্যল্লেখনীপুস্তকশ্রীঃ
সকলবিভবসিন্ধ্যৈ পাতু বাগদেবতা নঃ ।।
এর অর্থ- চন্দ্রের তরুণ অংশের ন্যায় যাঁর কান্তি শুভ্র, যিনি কুচভরে অবনতাঙ্গী, যিনি শ্বেত পদ্মাস্থনা , যাঁর নিজ কর কমলে উদ্যত লেখনী ও পুস্তক শোভিত , সকল ঐশ্বর্য সিদ্ধির নিমিত্ত সেই বাগদেবী আমাদিগকে রক্ষা করুন ।
 
সরস্বতীর জপ মন্ত্রঃ
ওঁ বদ্ বদ্ বাগ্বাদিনি স্বাহা।
সরস্বতীর প্রনাম
……………………………
সরস্বতী মহাভাগে বিদ্যে কমললোচনে।
বিশ্বরূপে বিশালাক্ষ্মী বিদ্যাংদেহি নমোহস্তুতে।।
 
অঞ্জলিঃ
ভদ্রকাল্যৈ নমো নিত্যং সরস্বত্যৈ নমো নমঃ ।
বেদ –বেদাঙ্গ বেদান্তবিদ্যাস্থানেভ্য এব চ ।।
জয় জয় দেবী চরাচর সারে, কুচযুগশোভিত মুক্তাহারে।
বীনারঞ্জিত পুস্তক হস্তে, ভগবতী ভারতী দেবী নমহস্তুতে।।
 
এর অর্থ- সরস্বতী দেবী মহাভাগ, কমলের ন্যায় লোচনা দেবী , বিশালাক্ষী বিদ্যা দায়িনী দেবীকে নমস্কার । ভদ্রকালিকে ( মঙ্গলময়ী ভগবতী ) কে নিত্য নমস্কার , দেবী সরস্বতীকে পুনঃ পুনঃ নমস্কার এবং বেদ বেদাঙ্গ বিদ্যা স্থানকে নমস্কার । কুচ যুগ শোভিতা মুক্তাহার পরিহিতা যিনি বীনা পুস্তক ধারন করে থাকেন সেই ভগবতী ভারতী কে নমস্কার ।
 
বেদে সরস্বতী নদী জ্যোতিরূপে বর্ণনা করা হয়েছে। সরস্বতী নদীর তীরে বসে যে বৈদিক মন্ত্র উচ্চারিত হোতো- সেটা লেখা আছে । বেদের সরস্বতীর ত্রয়ী মূর্তি। ভূঃ বা ভূলোকে ইলা, ভুবঃ বা অন্তরীক্ষে লোক সরস্বতী, এবং স্বর্ বা স্বর্গলোকে ভারতী। ভূ র্ভুবঃ স্বঃ – এই তিনে মিলে সামগ্রিক জগত । ভূলোকে অগ্নি, অন্তরীক্ষ লোকে হিরণ্য দ্যুতি ইন্দ্র এবং স্ব- লোকে সূর্য – এই তিনের যে জ্যোতি রাশি – তাঁহা সরস্বতীর জ্যোতি। জ্ঞানময়ী বা চিন্ময়ী রূপে তিনি সর্বত্র , সর্ব ব্যাপিনী। তাঁর জ্যোতি সর্বত্র পরিব্যাপ্ত । শুধু এই ত্রিলোক নয় ঊর্ধ্ব সপ্ত লোক নিম্ন সপ্ত লোক পর্যন্ত চতুর্দশ ভুবনে স্তরে স্তরে সেই জ্যোতি বিরাজিতা। সেই জ্যোতি অজ্ঞান রূপী তমসা কে নিবারন করে। যোগী হৃদয়ে যখন সেই আলো জ্বলে – তখন সকল প্রকার অন্ধকার নাশ হয়।
 
সরস্বতীর প্রণাম মন্ত্রঃ (বিদ্যারম্ভে প্রণাম মন্ত্র)
 
ওঁ সরস্বতী নমস্তুভ্যং বরদে কামরূপিণি।
বিদ্যারম্ভং করিষ্যামি সিদ্ধির্ভবন্তু মে সদা।।

বিদ্যাদেবীর পুস্পাঞ্জলি মন্ত্রঃ

ওঁ জয় জয় দেবী চরাচর সারে, কুচযুগ-শোভিত

মুক্তাহারে।

বীণাঞ্জিত পুস্তক হস্তে, ভগবতি ভারতি দেবী নমোহস্তুতে।
নমঃ ভদ্রকালৈ নমো নিত্যং সরস্বত্যৈ নমো নমঃ।

বেদে-বেদাঙ্গ-বেদান্ত -বিদ্যাস্থানেভ্য এব চ!!

এচ সচন্দন পুস্পবিল্ব- পত্রাঞ্জলি সবস্বতৈ নমঃ!!

 

আরো জানুনঃ 
  
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
  
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
   
 
 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ