উত্তরায়ণ তথা পৌষ বা মকর সংক্রান্তি কি?


 

#উত্তরায়ণ তথা #পৌষ বা #মকর #সংক্রান্তি কি ?

পৌষ সংক্রান্তিতে কি কি হয়েছিল?
আমরা সবাই পৌষ সংক্রান্তি হিসেবে জানলেও একে মকর, উত্তরায়ণ বা তিল সংক্রান্তিও বলা হয়। চলুন, দেখা নেয়া যাক সেই মহিমান্বিত তিথিতে আসলে কি হয়েছিল!
মহাপ্রভুর_সন্ন্যাসলীলা: আজ কলিযুগ পাবনাবতারী শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর ৫১১ তম সন্ন্যাস লীলা মহোৎসব। অর্থাৎ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু ১৫১০ খ্রিস্টাব্দে মাত্র ২৪ বছর বয়সে এই পৌষ-সংক্রান্তির দিনেই কন্টকনগরে অর্থাৎ কাটোয়ায় গুরু কেশবভারতের কাছ থেকে সন্ন্যাস দীক্ষা  প্রাপ্ত হন।
বৃন্দাবন দাস তাঁর চৈতন্যভাগবতে লিখেছেন,
এই সংক্রমণ উওরায়ণ দিবসে।
নিশ্চয় চলিব আমি করিতে সন্ন্যাসে।।
[#তথ্যসূত্র: মধ্যখন্ড, ২৬ অধ্যায়]
স্বর্গলোকে_দিনের_সূচনা: আমরা অনেকেই জানি, এক সৌরবর্ষে আমাদের এই মর্ত্যলোকে এক বছর পূর্ণ হলেও দেবতাদের গণনায় বা স্বর্গলোকে সেটা এক দিন মানে ২৪ ঘন্টা। এখন, ২৪ ঘন্টার মাঝে আবার ১২ ঘন্টা দিন  এবং বাকী ১২ ঘন্টা রাত💡বিদ্যমান।
তাই স্বর্গলোকে বা দেবতাদের হিসেবে মকর সংক্রান্তি থেকে পরর্বতী ছ'মাস তাদের দিন এবং কর্কট সংক্রান্তি থেকে পরর্বতী ছ'মাস তাদের রাত। অর্থাৎ আমারা সহজেই বুঝতে পারছি যে, আজকের এই মকর সংক্রান্তি থেকেই স্বর্গলোকে নতুন একটি দিনের সূচনা শুরু হয়।
ভগবানকে_পুত্ররূপে_প্রাপ্তি: আমরা সবাই জানি ভগবানকে পাঁচরূপে লাভ করা যায়, তার মধ্যে অন্যতম একটি হল বাৎসল্যপ্রেম । অর্থাৎ ভগবানকে পুত্ররূপে লাভ করা।
এখন, যারা আমার মত সরকারি চাকরী-প্রত্যাশী তারা অবশ্যই বুঝবেন যে, চাকরী পেতে কত কষ্ট  করতে হয়। তাহলে আপনি ভগবানকে পুত্ররূপে লাভ করবেন সেটা কি কষ্ট ছাড়া সম্ভব? 
অর্থাৎ, মাতা যশোদা পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে পুত্ররূপে পাওয়ার জন্য আজকের এই পৌষ বা মকর সংক্রান্তির দিন থেকে উনার কঠোর তপশ্চর্যা শুরু করেছিলেন।
ভগীরথের_পূর্বপুরুষ_উদ্ধার: আজকের এই মকর সংক্রান্তি দিনে ভগীরথ তিনি তাঁর পূূর্ব-পুরুষদেরকে উদ্ধার করবার জন্য গঙ্গাকে পৃথিবীতে আনয়ন করেছিলেন।
তখন গঙ্গা মহারাজ ভগীরথের পূর্ব-পুরুষদের উদ্ধার করে এই পৌষ সংক্রান্তির দিন সাগরে মিলিত হয়েছিলেন। যেহেতু গঙ্গা সাগরে মিলিত হয়েছিলেন, তাই বিশাল এক গঙ্গাসাগর মেলা অনুষ্ঠিত হয় ভারতবর্ষে।
মহামহিম_ভীষ্মেদেবের_মুক্তি: ভীষ্মদেব ইচ্ছামৃত্যুর বরপ্রাপ্ত ছিল, অর্থাৎ তিনি যখন ইচ্ছা করবেন তখনই প্রাণত্যাগ করতে পারবেন। মহাভারতের যুদ্ধের ১০তম দিনে ভীষ্মদেব অর্জুনের বানে শরবিদ্ধ হলেন এবং সেই অবস্থায় তিনি টানা ৫৬ দিন (কেউবা বলেন ৫৪ দিন, আমি সঠিক জানি না) তীরবদ্ধ অবস্থায় শয্যারত ছিলেন।
কারণ তিনি আজকের মকর সংক্রান্তির দিনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। গীতায় রয়েছে 📖,
"উওরায়ণের ছয় মাস কেউ দেহ ত্যাগ করলে আর এই জগতে ফিরে আসতে হয় না।"
অতএব, আজকের পৌষ সংক্রান্তি দিনেই ভীষ্মদেব নিজ ইচ্ছায় প্রাণত্যাগ করেছিলেন।
কি_করণীয়: আজকের এই মহিমান্বিত দিনে আমরা যা যা করতে পারি!
• আমরা গঙ্গা আদি পবিত্র নদীসমূহে স্নান করতে পারি।
• সাধু-ব্রাহ্মণদের দান-দক্ষিণা করতে পারি।
• যেহেতু তিল সংক্রান্তি তাই তিলের তৈরি পিঠা তৈরি করে সূর্যদেব এবং ভগবানকে নিবেদন করতে পারি।
• মহিমান্বিত এই দিনে আমরা যেন কোনো প্রকার আমিষ আহার না করি।
• আমরা বেশি করে শাস্ত্র অধ্যয়ন এবং হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করতে পারি।
 
 
পৌষ সংক্রান্তিতে কি কি হয়েছিল?

 

 
 
 পুত্রদা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য 
যুধিষ্ঠি বললেন-হে কৃষ্ণ!! পৌষ মাসের শুক্লপক্ষের একাদশীর নাম কি? বিধিই বা কি,কোন দেবতা ঐ দিনে পূজিত হন এবং আপনি কার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে সেই ব্রতফল প্রদান করেছিলেন কৃপা করে আমাকে সবিস্তারে বলুন!!
.
শ্রীকৃষ্ণ বললেন–হে মহারাজ!! এই একাদশী “পুত্রদা” নামে প্রসিদ্ধ। সর্বপাপবিনাশিনী ও কামদা এই একাদশীর অধিষ্ঠাত্রী দেবতা হলেন সিদ্ধিদাতা নারায়ণ!! ত্রিলোকে এর মত শ্রেষ্ঠ ব্রত নেই! এই ব্রতকারীকে নারায়ণ বিদ্বান ও যশস্বী করে তোলেন!এখন আমার কাছে এ-ই ব্রতের মাহাত্ম্য শ্রবণ কর। ভদ্রাবতী পুরীতে সুকেতুমান নামে এক রাজা ছিলেন!তাঁর রানীর নাম ছিল শৈব্যা!! রাজদম্পতি বেশ সুখেই দিনযাপন করছিলেন!!
.
বংশরক্ষার জন্য বহুদিন ধরে ধর্মকর্মের অনুষ্ঠান করেও যখন পুত্রলাভ হল না!!তখন রাজা দুশ্চিন্তায় কাতর হয়ে পড়লেন।
তাই সকল ঐশ্বর্য্যবান হয়েও পুত্রহীন রাজার মনে কোন সুখ ছিল না!! তিনি ভাবতেন–পুত্রহীনের জন্ম বৃথা ও গৃহশূন্য। পিতৃ–দেব –মনুষ্যলোকের কাছে যে ঋণ শাস্ত্রে উল্লেখ আছে,তা পুত্র বিনা পরিশোধ হয় না! পুত্রবানজনের এ জগতে যশলাভ ও উত্তম গতি লাভ হয় এবং তাদের আয়ু,আরোগ্য ,সম্পত্তি প্রভৃতি বিদ্যমান থাকে!! নানা দুশ্চিন্তাগ্রস্থ রাজা আত্মহত্যা করবেন বলে স্থির করলেন। কিন্তু পরে বিচার করে দেখলেন – ‘আত্মহত্যা মহাপাপ,এর ফলে কেবল দেহের বিনাশমাত্র হবে!!
.
কিন্তু আমার পুত্রহীনতা তো দূর হবে না।তারপর একদিন রাজা নিবিড় বনে গমন করলেন!!বন ভ্রমণ করতে করতে দ্বিপ্রহর অতিক্রান্ত হলে রাজা ক্ষুধা-তৃষ্ণায় অত্যন্ত কাতর হলেন!! এদিক ওদিক জলাদির অনুসন্ধান করতে লাগলেন। তিনি চক্রবাক,রাজহংস এবং নানারকম মাছে পরিপূর্ণ একটি মনোরম সরোবর দেখতে পেলেন!!সরোবরের কাছে মুনিদের একটি আশ্রম ছিল।তিনি সেখানে উপস্থিত হলেন। সরোবর তীরে মুনিগণ বেদপাঠ করছিলেন!!মুনিবৃন্দের শ্রীচরণে তিনি দণ্ডবৎ প্রণাম করলেন। মুনিগণ রাজাকে বললেন–হে মহারাজ!!
.
আমরা আপনার প্রতি প্রসন্ন হয়েছি। আপনার কি প্রার্থনা বলুন। রাজা বললেন–আপনারা কে এবং কি জন্যই বা এখানে সমবেত হয়েছেন? মুনিগণ বললেন–হে মহারাজ! আমরা ‘বিশ্বদেব’ নামে প্রসিদ্ধ। এই সরোবরে স্নান করতে এসেছি!!আজ থেকে পাঁচদিন পরেই মাঘ মাস আরম্ভ হবে। আজ পুত্রদা একাদশী তিথি। পুত্র দান করে বলেই এই একাদশীর নাম ‘পুত্রদা’ তাঁদের কথা শুনে রাজা বললেন–হে মুনিবৃন্দ!! আমি অপুত্রক।
.
তাই পুত্র কামনায় অধীর হয়ে পড়েছি। এখন আপনাদের দেখে আমার হৃদয়ে আশার সঞ্চার হয়েছে!!এ দুর্ভাগা পুত্রহীনের প্রতি অনুগ্রহ করে একটি পুত্র প্রদান করুন। মুনিগণ বললেন–হে মহারাজ! আজ সেই পুত্রদা একাদশী তিথি!!তাই এখনই আপনি এই ব্রত পালন করুন। ভগবান শ্রীকেশবের অনুগ্রহে অবশ্যই আপনার পুত্র লাভ হবে!!মুনিদের কথা শোনার পর যথাবিধানে রাজা কেবল ফলমূলাদি আহার করে সেই ব্রত অনুষ্ঠান করলেনদ্বাদশী দিনে উপযুক্ত সময়ে শস্যাদি সহযোগে পারণ করলেন!!
.
মুনিদের প্রণাম নিবেদন করে নিজগৃহে ফিরে এলেন। ব্রতপ্রভাবে রাজার যথাসময়ে একটি তেজস্বী পুত্র লাভ হল!! হে মহারাজ!এ ব্রত সকলেরই পালন করা কর্তব্য। মানব কল্যাণ কামনায় আপনার কাছে আমি এই ব্রত কথা বর্ণনা করলাম!!
নিষ্ঠাসহকারে যারা এই পুত্রদা একাদশী ব্রত পালন করবে,তারা ‘পুত’ নামক নরক থেকে পরিত্রাণ লাভ করবে!!আর এই ব্রত কথা শ্রবণ–কীর্তনে অগ্নিষ্টোম যজ্ঞের ফল পাওয়া যায়। ব্রহ্মাণ্ড পুরাণে এই মাহাত্ম্য বর্ণনা করা হয়েছে।
 
 একাদশী ব্রত পালনের তাৎপর্য ও নিয়মাবলি

একসময় জৈমিনি ঋষি তার গুরুদেব মহর্ষি ব্যাসদেবকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে গুরুদেব! একাদশী কী? একাদশীতে কেন উপবাস করতে হয়? একাদশী ব্রত করলে কী লাভ? একাদশী ব্রত না করলে কী ক্ষতি? এ সব বিষয়ে আপনি দয়া করে বলুন।

মহর্ষি ব্যাসদেব তখন বলতে লাগলেন-সৃষ্টির প্রারম্ভে পরমেশ্বর ভগবান এই জড় সংসারে স্থাবর জঙ্গম সৃষ্টি...করলেন।

মর্ত্যলোকবাসী মানুষদের শাসনের জন্য একটি পাপপুরুষ নির্মাণ করলেনা। সেই পাপপুরুষের অঙ্গণ্ডলো বিভিন্ন পাপ দিয়ে নির্মিত হল। পাপপুরুষের মাথাটি ব্রহ্মহত্যা পাপ দিয়ে, চক্ষুদুটি মদ্যপান, মুখ স্বর্ণ অপহরণ, দুই কর্ণ-ণ্ডরুপত্নী গমন, দুই নাসিকা-স্ত্রীহত্যা, দুই বাছ-গোহত্যা পাপ, গ্রীবা-ধন অপহরণ, গলদেশ-ভ্রূণহত্যা, বক্ষ-পরস্ত্রী-গমন, উদর-আত্মীয়স্বজন বধ, নাভি-শরণাগত বধ, কোমর-আত্মশ্লাঘা, দুই ঊরু-ণ্ডরুনিন্দা, শিশ্ন-কন্যা বিক্রি, মলদ্বার-ণ্ডপ্তকথা প্রকাশ পাপ, দুই পা-পিতৃহত্যা, শরীরের রোম-সমস্ত উপপাতক। এভাবে বিভিন্ন সমস্ত পাপ দ্বারা ভয়ঙ্কর পাপপুরুষ নির্মিত হল।

পাপপুরুষের ভয়ঙ্কর রূপ দর্শন করে ভগবান শ্রীবিষ্ণু মর্ত্যের মানব জাতির দুঃখ মোচন করবার কথা চিন্তা করতে লাগলেন। একদিন গকড়ের পিঠে চড়ে ভগবান চললেন যমরাজের, মন্দিরে। ভগবানকে যমরাজ উপযুক্ত স্বর্ণসিংহাসনে বসিয়ে পাদ্য -অর্ঘ্য ইত্যাদি দিয়ে যথাবিধি তার পূজা করলেন।

যমরাজের সঙ্গে কথোপকথনকালে ভগবান শুনতে পেলেন দক্ষিণ দিক থেকে অসংখ্য জীবের আর্তক্রন্দন ধ্বনি। প্রশ্ন করলেন-এ আর্তক্রন্দন কেন?

যমরাজ বললেন, হে প্রভু, মর্ত্যের পাপী মানুষেরা নিজ কর্মদোষে নরকযন্ত্রণা ভোগ করছে। সেই যাতনার আর্ত চিৎকার শোনা যাচ্ছে।

যন্ত্রণাকাতর পাপাচারী জীবদের দর্শন করে করুণাময় ভগবান চিন্তা করলেন--আমিই সমস্ত প্রজা সৃষ্টি করেছি, আমার সামনেই ওরা কর্ম দোষে দুষ্ট হয়ে নরক যান্ত্রণা ভোগ করছে, এখন আমিই এদের সদগতির ব্যবস্থা করব।

ভগবান শ্রীহরি সেই পাপাচারীদের সামনে একাদশী তিথি রূপে এক দেবীমূর্তিতে প্রকাশিত হলেন। সেই পাপীদেরকে একাদশী ব্রত আচরণ করালেন। একাদশী ব্রতের ফলে তারা সর্বপাপ মুক্ত হয়ে তৎক্ষণাৎ বৈকুণ্ঠ ধামে গমন করল।

শ্রীব্যাসদেব বললেন, হে জৈমিনি! শ্রীহরির প্রকাশ এই একাদশী সমস্ত সুকর্মের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এবং সমস্ত ব্রতের মধ্যে উত্তম ব্রত।

কিছুদিন পরে ভগবানের সৃষ্ট পাপপুরুষ এসে শ্রীহরির কাছে করজোড়ে কাতর প্রার্থনা জানাতে লাগল-হে ভগবান! আমি আপনার প্রজা। আমাকে যারা আশ্রয় করে থাকে, তাদের কর্ম অনুযায়ী তাদের দুঃখ দান করাই আমার কাজ ছিল। কিন্তু সম্প্রতি একাদশীর প্রভাবে আমি কিছুই করতে পারছি না, বরং ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছি। কেননা একাদশী ব্রতের ফলে প্রায় সব পাপাচারীরা বৈকুণ্ঠের বাসিন্দা হয়ে যাচ্ছে। হে ভগবান, এখন আমার কী হবে? আমি কাকে আশ্রয় করে থাকব? সবাই যদি বৈকুণ্ঠে চলে যায়, তবে এই মর্ত্য জগতের কী হবে? আপনি বা কার সঙ্গে এই মর্ত্যে ক্রীড়া করবেন?

পাপপুরুষ প্রার্থনা করতে লাগল-হে ভগবান, যদি আপনার এই সৃষ্ট বিশ্বে ক্রীড়া করবার ইচ্ছা থাকে তবে, আমার দুঃখ দূর করুন। একাদশী ভয় থেকে আমাকে রক্ষা করুন। হে কৈটভনাশন, আমি একমাত্র একাদশীর ভয়ে ভীত হয়ে পলায়ন করছি। মানুষ, পশুপাখি, কীট-পতঙ্গ, জলত-স্থল, বনপ্রান্তর, পর্বত-সমুদ্র, বৃক্ষ, নদী, স্বর্গ-মর্ত্য-পাতাল সর্বত্রই আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্ত একাদশীর প্রভাবে কোথাও নির্ভয় স্থান পাচ্ছি না দেখে আজ আপনার শরণাপন্ন হয়েছি।

হে ভগবান, এখন দেখছি, আপনার সৃষ্ট অনন্ত কোটি ব্রহ্মাণ্ডের মধ্যে একাদশীই প্রাধান্য লাভ করেছে, সেইজন্য আমি কোথাও আশ্রয় পেতে পারছি না। আপনি কৃপা করে আমাকে একটি নির্ভয় স্থান প্রদান করুন।

পাপপুরুষের প্রার্থনা শুনে ভগবান শ্রীহরি বলতে লাগলেন-হে -পাপপুরুষ! তুমি দুঃখ করো না। যখন একাদশী এই ত্রিভুবনকে পবিত্র করতে আবির্ভূত হবে, তখন তুমি অন্ন ও রবিশস্যের মধ্যে আশ্রয় গ্রহণ করবে তা হলে আমার মূর্তি একাদশী তোমাকে বধ করতে পারবে না।

একাদশী পালনের নিয়মাবলি

একাদশীর মূল কাজ হল– নিরন্তর ভগবানকে স্মরণ করা। তাই আপনারা যে নিয়মে, যে সময়ে পালন করুন না কেন, ভগবানকে ভক্তিভরে স্মরণ করাই যেন আপনারই মূল কাজ হয়। একাদশী পালনের সাত্ত্বিক নিয়মগুলো হলো:

□ ১। সমর্থ পক্ষে দশমীতে একাহার, একাদশীতে নিরাহার, ও দ্বাদশীতে একাহার করতে হবে ।

□ ২। তা হতে অসমর্থ পক্ষে শুধুমাত্র একাদশীতে অনাহার।

□ ৩। যদি উহাতেও অসমর্থ হন, একাদশীতে পঞ্চ রবিশস্য বর্জন করে ফলমূলাদি অনুকল্প গ্রহণের বিধান রয়েছে।

□ সমর্থ পক্ষে রাত জাগরণের বিধি আছে, গৌড়ীয় ধারায বা আচার্যবৃন্দের অনুমোদিত পঞ্জিকায় যে সমস্ত একাদশী নির্জলা (জল ব্যতীত) পালনের নির্দেশ প্রদান করেছেন, সেগুলি সেমতে পালন করলে সর্বোত্তম হয়। নিরন্তর কৃষ্ণভাবনায় থেকে নিরাহার থাকতে অপারগ হলে নির্জলাসহ অন্যান্য একাদশীতে কিছু — সবজি, ফলমূলাদি গ্রহণ করা যেতে পারে । যেমন — গোল আলু, মিষ্টি আলু, চাল কুমড়ো, পেঁপে, টমেটো, ফুলকপি ইত্যাদি সবজি ঘি অথবা বাদাম তেল দিয়ে রান্না করে ভগবানকে উৎসর্গ করে আহার করতে পারেন। হলুদ, মরিচ, ও লবণ ব্যবহার্য। আবার অন্যান্য আহার্য, যেমন — দুধ, কলা, আপেল, আঙুর, আনারস, আখ, আমড়া শস্য, তরমুজ, বেল, নারিকেল, মিষ্টি আলু , বাদাম ও লেবুর শরবত ইত্যাদি ফলমূলাদিও খাওয়া যেতে পারে ।

□ একাদশীতে পাঁচ প্রকার রবিশস্য গ্রহণ করতে নিষেধ করা হয়েছেঃ—

□ ১। ধানজাতীয় সকল প্রকার খাদ্য যেমন – চাউল, মুড়ি, চিড়া, সুজি, পায়েস, খিচুড়ি, চালের পিঠা, খৈ ইত্যাদি

□ ২। গমজাতীয় সকল প্রকার খাদ্য যেমন – আটা, ময়দা, সুজি, বেকারির রুটি , বা সকল প্রকার বিস্কুট, হরলিকস ইত্যাদি ।

□ ৩। যব বা ভুট্টাজাতীয় সকল প্রকার খাদ্য যেমন — ছাতু, খই, রুটি ইত্যাদি ।

□ ৪। ডালজাতীয় সকল প্রকার খাদ্য যেমন — মুগ, মাসকলাই, খেসারি, মসুরি, ছোলা অড়হর, ফেলন, মটরশুঁটি, বরবটি ও সিম ইত্যাদি ।

□ ৫। সরিষার তেল, সয়াবিন তেল, তিলের তেল ইত্যাদি। উপর্যুক্ত পঞ্চ রবিশস্যের যেকোন একটি একাদশীতে গ্রহণ করলে ব্রত নষ্ট হয়।

□ উল্লেখ্য যারা সাত্ত্বিক আহারী নন এবং চা, বিড়ি/সিগারেট, পান, কফি ইত্যাদি নেশাজাতীয় দ্রব্য গ্রহণ করেন, একাদশী ব্রত পালনের সময়কাল পর্যন্ত এগুলি গ্রহণ না করাই ভালো।

□ সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন, একাদশী করলে যে কেবল নিজের জীবনের সদ্গতি হবে তা নয়। একাদশী পালন করা ব্যক্তির প্রয়াত পিতা/মাতা যদি নিজ কর্ম দোষে নরকবাসী হন, তবে সেই পুত্রই (একাদশী ব্রত) পিতা–মাতাকে নরক থেকে উদ্ধার করতে পারে। একাদশীতে অন্ন ভোজন করলে যেমন নরকবাসী হবে, অন্যকে ভোজন করালেও নরকবাসী হবে।

□ একাদশী পারণঃ (একাদশী তিথির পরদিন উপবাস ব্রত ভাঙার পর নিয়ম) পঞ্জিকাতে একাদশী পারণের (উপবাসের পরদিন সকালে) যে নির্দিষ্ট সময় দেওয়া থাকে, সেই সময়ের মধ্যে পঞ্চ রবিশস্য ভগবানকে নিবেদন করে, প্রসাদ গ্রহণ করে পারণ করা একান্ত দরকার। নতুবা একাদশীর কোন ফল লাভ হবে না। একাদশী ব্রত পালনের প্রকৃত উদ্দেশ্য কেবল উপবাস করা নয়, নিরন্তর শ্রীভগবানের নাম স্মরণ, মনন, ও শ্রবণ কীর্তনের মাধ্যমে একাদশীর দিন অতিবাহিত করতে হয় । এদিন যতটুকু সম্ভব উচিত । একাদশী পালনের পরনিন্দা, পরচর্চা, মিথ্যা ভাষণ, ক্রোধ, দুরাচার, স্ত্রী সহবাস সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ। □ বিঃ দ্রঃ নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর প্রতি দৃষ্টি রাখা বাঞ্ছনীয়ঃ — একাদশী ব্রতের আগের দিন রাত ১২ টার আগেই অন্ন ভোজন সম্পন্ন করে নিলে সর্বোত্তম। ঘুমানোর আগে দাঁত মাজা।

□ রাতে ব্রাশ করে দাঁত ও মুখগহবরে লেগে থাকা সব অন্ন পরিষ্কার করে নেওয়া সর্বোত্তম। সকালে উঠে শুধু মুখ কুলি ও স্নান করতে হয়।

□ একাদশীতে সবজি কাটার সময় সতর্ক থাকতে হবে যেন কোথাও কেটে না যায়। একাদশীতে রক্তক্ষরণ বর্জনীয়। দাঁত মাজার সময় অনেকের রক্তক্ষরণ হয়ে থাকে। তাই একাদশীর আগের দিন রাতে দাঁত ভালোভাবে মেজে নেওয়াই সমীচীন।

□ একাদশীতে চলমান একাদশীর মাহাত্ম্য ভগবদ্ভক্তের শ্রীমুখ হতে শ্রবণ অথবা সম্ভব না হলে নিজেই ভক্তি সহকারে পাঠ করতে হয়।

□ যারা একাদশীতে একাদশীর প্রসাদ রান্না করেন, তাদের পাঁচফোড়ন ব্যবহারে সতর্ক থাকা উচিৎ, কারণ পাঁচফোড়নে সরিষার তৈল ও তিল থাকতে পারে যা বর্জনীয়।

□ একাদশীতে শরীরে প্রসাধনী ব্যবহার নিষিদ্ধ। তৈল (শরীরে ও মাথায়) সুগন্ধি, সাবান, শ্যাম্পু ইত্যাদি বর্জনীয়।

□ সকল প্রকার ক্ষৌরকর্ম — দাড়ি-গোঁফ করা এবং চুল ও নখ কাটা নিষিদ্ধ। 

 


 


 

 

আরো পড়ুন.....

১.রামায়ণ কথা  

২. অহল্যা চরিত্র 

৩.ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কেন মাথায় ময়ূরপালক/পুচ্ছ পরিধান করতেন?? 

.ভূমন্ডলে তুলসীর আবির্ভাব কীভাবে হলো? 

৫. মীরাবাঈ কে ?

৬. দ্রোপদীকে দেয়া ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শ্রেষ্ঠ কিছু বানী

৭. মহাভারতের ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বাণী ও শ্রীকৃষ্ণের উপদেশ

 
 
 
 
 
 

 

 
সনাতন ধর্ম সম্পর্কে জা্নতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন-
 

আমাদের সমস্ত দুঃখের কারণ অজ্ঞনতা। সুতরাং জানতে হলে পড়তে হবে।

 

শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা পড়তে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন.......

 

এখানে ক্লিক করুন

 


শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার আলোকে  মানব জীবনের গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্বজিজ্ঞাসা প্রশ্ন-উত্তরে জানতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন.......

 

এখানে ক্লিক করুন

 


 

একাদশী ব্রত পালনের তাৎপর্য ও নিয়মাবলি এবং বছরের সব একাদশির মাহাত্ম্য সম্পর্কে জানতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন.......

 

এখানে ক্লিক করুন

 

 

পূজা-পার্বনের তাৎপর্য ও মহিমা সম্পর্কে জানতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন.......

 

এখানে ক্লিক করুন

 

 

 

আরতি-উপসনা-প্রার্থনা সম্পর্কে জানতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন.......

 

এখানে ক্লিক করুন

 

 


সনাতন পারমার্থিক জ্ঞান সম্পর্কে জানতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন.......

 

এখানে ক্লিক করুন

 

 

গুরুতত্ত্ব সম্পর্কে জানতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন.......

 

এখানে ক্লিক করুন

 

 


 

 মধুর নামকীর্তন শুনতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন.......

 

এখানে ক্লিক করুন

 

পোস্টটি ভাল লাগে অবশ্যই স-কলকে শেয়ার করবেন।
প্রনিপাত
সদা সর্বদা শ্রী শ্রী রাধা ও কৃষ্ণের পাদপদ্মের কথা স্মরণ করুন, তাহলে শ্রীকৃষ্ণের দ্বারা আপনার জন্য বরাদ্দকৃত কার্য সম্পাদন করতে কোনও অসুবিধা অনুভব করতে হবে না।
জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে শ্রীকৃষ্ণের কৃপার প্রতি অগাধ বিশ্বাস ও ভরসা রাখতে হবে।
শ্রীকৃষ্ণের পবিত্র নামটিতে অসাধারণ আধ্যাত্মিক শক্তি রয়েছে কারণ শ্রীকৃষ্ণের নাম স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণের থেকে আলাদা নয় ....
ঐকান্তিক ভালবাসা এবং নিষ্ঠার সাথে এই নামগুলি জপ করুন তবেই আপনি চিণ্ময় আনন্দ অনুভব করবেন:
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে ...(১০৮ বার)
হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করুন এবং সুখী হন ...

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ