ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পুষ্যাভিষেক
▪️পুষ্যাভিষেক বা পুষ্প অভিষেক কি ? পুষ্যাভিষেক বা পুষ্প অভিষেক কিভাবে উদযাপন করবেন ?
পুষ্যাভিষেক হচ্ছে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের উদ্দেশ্যে সবর্তোভাবে উৎসর্গ করার
উৎসবগুলির মধ্যে অন্যতম একটি উৎসব। সাধারণ শীতকালে বিভিন্ন ধরনের ফুল ফোটার
সময়। এই ফুলগুলি দেখতে অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর ও সুগন্ধিযুক্ত। আর এই আকর্ষনীয়
ফুলগুলি শ্রীকৃষ্ণেকে সন্তুষ্টি বিধানার্থে এমনভাবে অর্পন করা হয় যে, যার
ফলে শ্রীবিগ্রহগণের অভিষেক সাধিত হয় এবং ফুলে ফলে শ্রীবিগ্রহগণ ঢাকা পড়ে।
যা শ্রীকৃষ্ণকে ঋতু অনুসারে সবচেয়ে সুন্দর মনোমুগ্ধকর, আকর্ষণীয় ও ভাল
বস্তুটি নিবেদনের শিক্ষা প্রদান করে। এই রকম সবচেয়ে ভাল বস্তু নিবেদনের
শিক্ষা আমরা ভগবান শ্রীকষ্ণের মহান মহান ভক্তদের জীবন চরিত্রে দেখতে পাই।
যেমন সবচেয়ে সুগন্ধিযুক্ত অগুরু এবং চন্দন যা শুধু মথুরা রাজা কংসের জন্য
অতি যত্নের সাথে পুষ্প প্রস্তুত করে নিয়ে যেত। পরে কংসের পরিবর্তে
শ্রীকৃষ্ণকে সমস্ত সুগন্ধিযুক্ত চন্দন অর্পন করে তাঁর কৃপা কণা লাভ করে।
একইভাবে বৃদ্ধা ফলওয়ালী যিনি বৃন্দাবনের বিভিন্ন বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফল বিক্রি
করতেন। তিনিও তার ঝুড়ির সমস্ত ফল শ্রীকৃষ্ণকে নিবেদন করে তাঁর বিশেষ করুনা
লাভ করে। অন্যদিকে রামভক্ত নিজে একটু করে খেয়ে বাছাই করে শ্রীরামের জন্য
জমা করেছিলেন আর শ্রীরামচন্দ্র তা প্রীতিভাবে গ্রহণ করে সৌভরিকে করুনা
করেন। এইভাবে ভগবানকে নিবেদন করার ঘটনা বহু ভক্তের জীবনীতে দেখা যায়। তারই
পরিবর্তে বর্তমানে ইস্কন মন্দিরগুলি ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে পুষ্প নিবেদনের
উৎসবটি আড়ম্বর পূর্ণভাবে পালন করে আসছে এবং উৎসবটি জানুয়ারি ২১ তারিখে সেই
দিন ইস্কন মন্দির গুলিতে নানা রকম আয়োজন থাকে। পুষ্প দিয়ে মহাঅভিষেকের পাশা
পাশি থাকে দিনব্যাপী হরিনাম সংকীর্তন, কৃষ্ণকথা পরিবেশন এবং কৃষ্ণ প্রসাদ
বিতরণ ইত্যাদি এই উৎসবে আপরা প্রতেকেই অংশগ্রহন করে ভগবান শ্রীকৃষ্ণেকে
সবর্তো উৎসর্গ করে যে করুণা লাভ হয় তার অংশীদারি হতে পারেন।
পৌষ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে অনুষ্ঠেয় শ্রীশ্রী রাধা-কৃষ্ণের অভিষেক
অনুষ্ঠান। পুষ্যা
নক্ষত্রে এই অভিষেক হয়েছিল তাই পুষ্যাভিষেক। এইদিন নানা রঙ্গের ফুল দিয়ে
শ্রী শ্রী রাধামাধবকে অনেক আড়ম্বরপূর্ণভাবে অভিষেক করে বলে অনেকে
পুষ্পাভিষেকও বলে।
🌼ব্রজলীলায় এইদিন ব্রজগােপীগণ পরম আদরে শ্রীশ্রীরাধা-শ্যামসুন্দরকে বহুবিধ বনফুল দিয়ে সাজিয়েছিলেন।
🌼রাধা-কৃষ্ণের
নিত্য চিন্ময় সেবা সুখ বৃদ্ধিই ব্রজ গােপীকাদের একমাত্র মনােবাঞ্ছা। যুগল
স্বরূপের আনন্দ বর্ধনই তাদের প্রাত্যহিক কর্ম। ব্রজগােপীরা এইদিন
ব্রজেশ্বরী রাধারাণী ও প্রাণনাথ শ্যামসুন্দরকে নানা রং ও গন্ধের পুষ্প ও
মাল্য দিয়ে এত পরিমাণ সাজিয়েছিলেন যেন, তারা তাদের নিজের সৌন্দর্যকেই
ভুলে যান।
🌼স্কন্ধ
পুরাণ অনুসারে পুষ্যাভিষেক যাত্রা মূলত শ্রীপুরী জগন্নাথ মন্দিরের দ্বাদশ
যাত্রার একটি, এই তিথিতে শ্রীদারুব্রক্মের বিজয় বিগ্রহ শ্রীমদনমােহনের
বিশেষ অভিষেক, শৃঙ্গারাদি হয়ে থাকে, সে থেকেই পুষ্যাভিষেক অনুষ্ঠান হয়ে
আসছে। এখন সেটাকে কেন্দ্র করেই শ্রীশ্রীরাধা-মাধবের এদিনে পুষ্প শৃঙ্গার ও
অভিষেকাদি হয়ে থাকে।
🌼কৃষ্ণ যখন কোন অসুরকে নিধন করতেন তখন কৃষ্ণের বন্ধুরা পুষ্প বৃষ্টি করে তাঁকে স্বাগত জানাতেন।
🌼গােপীগণ রাসলীলায়ও পুষ্প বৃষ্টি করে শ্রীশ্রী রাধা-শ্যামসুন্দরের আনন্দ বর্ধন করেছেন।
🌼দ্বারকায়ও শ্রীকৃষ্ণকে পুষ্প বৃষ্টি করে দ্বারকাবাসীরা স্বাগত জানিয়েছেন।
🌼অযােধ্যার নাগরিকগণও ভগবান শ্রী রামচন্দ্রকে পুষ্পবৃষ্টি করে অযােধ্যাতে স্বাগত জানিয়েছিলেন।
🌼মাতঙ্গ
ঋষি মাতা শবরীকে বলেছিলেন একদিন ভগবান রামচন্দ্র তার আশ্রমে আসবেন। সেই
থেকে মাতা শবরী দিনের পর দিন বছরের পর বছর প্রতিদিন নতুন নতুন পুষ্প দিয়ে
আশ্রমের রাস্তা সজ্জিত করেছেন ভগবানের আসার প্রতীক্ষায়।
কিভাবে উদযাপন করবেন ?
শ্ৰীমদ্ভগবদগীতায় বলা হয়েছে-পত্রং পুষ্পং ফলং তুয়ং...
শ্রীল
প্রভুপাদ বলেছেন-আপনি যখন ভক্তি ও প্রীতি সহকারে ভগবানকে একটি পুষ্প
নিবেদন করবেন তখন আপনি অনুভব করতে পারবেন ভগবান আপনার নিবেদিত পুষ্প গ্রহণ
করেছেন এবং শ্রীবিগ্রহের হাস্যোজ্জল মুখমণ্ডলে আপনি দর্শন করতে পারবেন।
পুষ্প
অভিষেক হচ্ছে বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের উৎসব। এই দিন পুষ্প, অলংকার ও বস্ত্র দিয়ে শ্রীশ্রী রাধা-মাধবের
শ্রীবিগ্রহকে সুন্দরভাবে সজ্জিত করা হয়। হরিভক্তিবিলাস অনুসারে এই দিন
শ্রীবিগ্রহগণকে ঘি দিয়ে অভিষেক করানাে উচিত।
প্রত্যেকটি
ইসকন মন্দিরে ঐ দিন বিভিন্ন রং এর ফুল দিয়ে ভগবানকে সাজানাে হয়, পুষ্প
মাল্য প্রদান করা হয় ও অসংখ্য ভক্তবৃন্দের উপস্থিতিতে পুষ্প অভিষেক করানাে
হয় এবং কীর্তনমেলার আয়ােজন করা হয়।
আপনিও
নিজগৃহে শ্রীশ্রী রাধা-মাধবকে পুষ্প দিয়ে সাজাতে পারেন ও পুষ্প অভিষেক
করতে পারেন। সারাদিন যে কোনো সময় হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র কীর্তন করার মধ্য
দিয়ে।
হরে কৃষ্ণ
0 মন্তব্যসমূহ