মীরাবাঈ কে ?
মীরাবাঈ একজন বিখ্যাত ঋষি ও কৃষ্ণপ্রেমিক নারী। যিনি তার পুরো জীবনকে শ্রীকৃষ্ণের জন্য উৎসর্গ করেছিলেন। নিজ পরিবার থেকে শত বাঁধা-বিপত্তি আসার পরও তিনি অত্যন্ত ধার্মিকভাবে জীবনযাপন করেছিলেন। শ্রীকৃষ্ণের প্রেমে রচনা করেছেন অসংখ্য ভজন সংগীত, যা তাকে আজও অমর করে রেখেছে।
মীরাবাঈ ষোড়শ শতাব্দীর শুরুর দিকে রাজস্থানের মার্তা এলাকার চৌকারী গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা রতন সিং ছিলেন যোধপুরের প্রতিষ্ঠাতা রাও রাথুরের বংশধর।
তার বয়স যখন তিন বছর তখন একদিন এক সাধু তাদের বাড়িতে আসেন এবং মীরাবাঈকে শ্রীকৃষ্ণের একটি পুতুল দিলেন। তার বাবা মনে করলেন মীরাবাঈ কৃষ্ণের পূজা করতে পারবে না। সুতরাং তাকে পুতুলটি দেয়া ঠিক হবে না, কিন্তু দেখা গেল মীরাবাঈ কৃষ্ণের পুতুলটি পাওয়ার জন্য শক্ত বায়না ধরল। এমনকি সে খাওয়া-ধাওয়া বন্ধ করে দিল। এভাবে এক সময় শ্রী কৃষ্ণের প্রেমে পড়ে যায় মীরাবাঈ। শয়নে-স্বপনে সে কৃষ্ণপ্রেমে বিভোর হয়ে গেল। সে কৃষ্ণকে তার সারাজীবনের বন্ধু বানিয়ে ফেলল।
একদিন সে দেখল তার বাড়ির পাশের রাস্তা দিয়ে একটি বিয়ের বর-কনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছোট্ট মীরাবাঈ দৌড় দিয়ে তার মায়ের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করল যে তার স্বামী কে হবে? কৃষ্ণের প্রতি মেয়ের ভক্তি দেখে তার মা বললেন যে, কৃষ্ণই হবে মীরাবাঈর স্বামী। সেই থেকে কৃষ্ণের পূজায় নিজেকে নিবেদিত করে দিলেন তিনি।
দুর্ভাগ্যক্রমে শৈশবেই তার মা মারা যান। পরে এই অল্প বয়সেই তার বাবা চিতরের রাজপুত্র ভোজরাজের সঙ্গে তার বিয়ে দিয়ে দেন। ফলে মীরাবাঈর সামাজিক মর্যাদা আরও বেড়ে যায়। কিন্তু রাজমহলের এই বিলাসী জীবন তার ভালো লাগত না। কারণ তিনি যে কৃষ্ণপ্রেমে বিভোর।
তারপরও তিনি স্বামীর যথেষ্ট সেবাযত্ন করতেন। তবে প্রতি সন্ধ্যায় তিনি শ্রীকৃষ্ণের পূজায় বসে যেতেন এবং অত্যন্ত মধুর সুরে ভক্তিমুলক ভজন সংগীত গাইতেন। জানা যায়, ভজন গাওয়ার সময় তিনি এতই ধ্যানমগ্ন হয়ে যেতেন যে, তিনি চেতনা হারিয়ে ফেলতেন এবং গভীর মোহ ও কল্পনার রাজ্যে চলে যেতেন।
এদিকে মীরাবাঈর ভজন সংগীত শুনতে তার অনেক ভক্ত বাড়িতে চলে আসেন। কিন্তু তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন মীরাবাঈর এই কৃষ্ণভক্তির আচরণ পছন্দ করত না। এ নিয়ে স্বামী ও পরিবারের অন্যদের সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব লেগে যায়। তারপরও সে কৃষ্ণের পূজা বন্ধ করে নি।
একদিন তার এক ননদ অপপ্রচার চালায় যে, মীরাবাঈ বিভিন্ন পরপুরুষকে ঘরে নিয়ে আসেন। এতে মীরাবাঈর স্বামী রাগান্বিত হয়ে তরবারি নিয়ে তার ঘরে ঢুকেন। তখন তিনি দেখতে পান কোনো পুরুষ নয়, বরং শ্রীকৃষ্ণের একটি পুতুল নিয়ে মীরাবাঈ খেলা করছেন। সেদিন থেকে সমালোচনা প্রশংসা দুটিই মীরাবাঈর সঙ্গী হয়ে যায়।
ধীরে ধীরে মীরাবাঈর কৃষ্ণভক্তি ও ভজন সংগীতের প্রশংসা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এক সময় তার সেই ভজন সংগীতের প্রেমে পড়ে যান মোগল সম্রাট আকবর। কিন্তু মীরাবাঈর পরিবারের সঙ্গে আকবরের চরম শত্রুতা। তাই তিনি তানসেনকে সঙ্গে নিয়ে ছদ্মবেশে মীরাবাঈর বাড়িতে যান। তার ভজন সংগীত শুনে তিনি মীরাবাঈর চরণে এক অমূল্য মালা উপহার দেন। একজন মুসলমানের কাছ থেকে এমন উপহার নেয়ায় তাকে আত্মহত্যা করার কথা বলেন তার স্বামী।
স্বামীর আদেশ পালন করতে মীরাবাঈ নদীতে ঝাঁপ দিতে যান। এমন সময় তিনি অনুধাবন করতে পারেন যে, কৃষ্ণ তার কাছে এসে আত্মহত্যা না করতে বলছেন। বরং কৃষ্ণের নির্দেশে তিনি বৃন্দাবনে চলে যান এবং কৃষ্ণের পূজা করতে থাকেন। এক সময় তার স্বামী নিজের ভুল বুঝতে পেরে মীরাবাঈকে বাড়িতে নিয়ে আসেন।
কিছুদিন পর সম্রাট আকবরের সঙ্গে এক যুদ্ধে তার স্বামী মারা যান। এই সুযোগে সতীদাহ প্রথার অজুহাতে তার শ্বশুর চিতায় পুড়ে মরার জন্য মীরাবাঈকে আদেশ করেন। কিন্তু তিনি জানালেন, তিনি চিতায় পুড়ে মরতে পারবেন না। কারণ তার প্রকৃত স্বামী শ্রী কৃষ্ণ। যিনি কখনো মরতে পারেন না।
এরপর তিনি তার কিছু ভক্তকে নিয়ে আবার বৃন্দাবনে চলে যান। সেখানে তার অনুসারীদের নিয়ে তিনি অত্যন্ত গভীর ভক্তির সঙ্গে কৃষ্ণের চরণে ভজন সংগীত গাইতেন। কল্পনার রাজ্যে তিনি কৃষ্ণের সঙ্গে মনের ভাব প্রকাশ করতেন। এক সময় বিখ্যাত সাধক হিসেবে বিশ্বজুড়ে তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি সেখানে শ্রীকৃষ্ণের সাধনা করেছিলেন।
এভাবে তিনি আমাদেরকে দেখিয়ে গেছেন যে, স্রষ্টার জন্য সত্যিকার প্রেম-ভক্তি থাকলে কোনো কিছুই তার পূজা করতে বাঁধা দিতে পারে না। তাই স্রষ্টাপূজারী ধার্মিকদের জন্য এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
একসময় কৃষ্ণনামে বৃন্দাবন কাঁপিয়ে ছিলেন ভক্ত মীরাবাঈ:কৃষ্ণ বৃন্দাবনে ভক্ত মীরাবাঈ যখণ পৌছলেন , তখন বৃন্দাবনে শ্রীকৃষ্ণের যেই প্রধান মন্দিরটি ছিল ,
সেই মন্দিরের যে পূজারী ছিলেন , তিনি ত্রিশ বৎসর যাবৎ কোনো স্ত্রীলোক কে দেখেন নি ।
তিনি বাইরে বেরোতেন না এবং স্ত্রীলোক কে মন্দিরের ভিতরে প্রবেশ করতে দিতেন না ।
এক দ্বাররক্ষক ছিল যে মন্দিরের দুয়ারে দাঁড়িয়ে থাকতো আর কোন স্ত্রীলোক কে ভিতরে প্রবেশ করতে দেখলে বাধা দিত ।কি আজব দুনিয়া... ?
পূজারী স্বয়ং কৃষ্ণ ভক্ত ছিলেন অথচ কৃষ্ণের মন্দিরে কৃষ্ণ ভক্ত স্ত্রীলোক কে প্রবেশ করতে দিতেন না।
পূজারী খবর পেলেন যে মীরা হরিনাম কীর্তন করতে করতে মন্দিরের দিকে আসতেছে।
পূজারী দ্বারপালকে বলে দিল যে মীরা এসেগেছে ।
ওকে যেভাবেই হোক মন্দিরের দুয়ারেই আটকাতে হবে , যেন সে ভিতরে প্রবেশ না করতে পারে ।
মন্দিরের প্রধান পুরোহিত খুবই ভয়ভীত হয়ে গেছেন মীরাকে নিয়ে , কারন সে সাধারন ভক্ত ছিলনা।
তাই মন্দিরের দোয়ারে পাহারাদার আরো বাড়িয়ে দিলেন তিনি ।
পাহারাদারদের তিনি বললেন শুন সবাই , মীরা হলো কৃষ্ণ প্রেমী একটা পাগল স্ত্রীলোক , তাকে কোন অবস্থাতেই মন্দিরে প্রবেশ করতে দেবেনা , যদি দরকার পরে তাহলে জবরদস্তি করে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেবে ।
মীরা কৃষ্ণ ভজন করে নৃত্য করতে করতে বৃন্দাবনের সেই গ্রাম হয়ে মন্দিরের সামনে এসে উপস্থিত হলেন সঙ্গে গ্রামবাসীরাও একত্রিত হয়ে মীরার সঙ্গে নৃত্য করতে লাগলেন ।
দ্বাররক্ষীরা মীরার এই প্রেমভক্তিময় কৃষ্ণ ভজন শুনে মীরার সঙ্গে নাচতে লাগলো , তারা ভূলেই গেল যে দুয়ারের সামনে মীরাকে আটকাতে হবে ।
মীরা নাচতে নাচতে মন্দিরের ভিতরে প্রবেশ করে ফেললেন ।
পূজারী পূজা করতে ছিলেন , মীরাকে দেখে পূজারীর হাত থেকে পূজার থালাটি মাটিতে পরে গেল ।
পূজারী জোড়ে চিৎকার করে বলতে লাগলেন - তুই ভিতরে কি করে আসলি ? বেরিয়ে যা এখান থেকে ।
মীরা যে উওরটি দিলেন তা খুবই ভাবময় ছিল -
মীরা বলতে লাগলেন - আমিতো শুনেছিলাম একজন পুরুষই আছে - পরমাত্মা শ্রীকৃষ্ণ আর আমরা তো সবাই উনার সখী , কিন্তু আজ জানতে পারলাম যে দুইজন পুরুষ আছেন , একজন তুমিও আছো ।
তাহলে তুমি আমাদের মতো সখী নও পূজারীজী ।
তুমি এখানে সেজেগোজে দাঁড়িয়ে আছো কেন ? বেরিয়ে যাও এখান থেকে , এই মন্দিরের পুরোহিত হওয়ার যোগ্যতা তোমার নেই ।
ভালই হয়েছে তোমার হাত থেকে এই পূজার থালাটা নীচে পরে গেছে , এই থালাটি তোমার হাতে থাকা উচিৎ নয় । তুমি এখন স্ত্রী দেখতে পাচ্ছো , ত্রিশ বছর পর্যন্ত তুমি স্ত্রীলোক দেখনি তাহলে আজ আমাকে দেখে কিকরে বুঝলে যে আমি স্ত্রীলোক ?
এইভাবে না হয় না ই দেখলে কিন্তু স্বপ্নের মধ্যেতো অনেকবার দেখেছো একজন স্ত্রীলোককে শ্রীমতি রাধারানী ।
মীরা আরো বলতে লাগলেন -এই যে শ্রীকৃষ্ণের পাশেই শ্রীমতি রাধারানীর মূর্তি আছে - ইনি কি স্ত্রীলোক নন ? আর যদি তুমি বলো যে এটা তো মূর্তি , তাহলে তোমার কৃষ্ণও তো মূর্তি , তাহলে কেন মুর্খের মতো কাজ করছো ?
কিসের জন্য এই পূজার থাল , এই অর্চনা , এই ধূপ-দ্বীপ আর এইসব পূজার উপকরন ?কৃষ্ণের মূর্তি যদি মূর্তি না হয়ে থাকে তাহলে এই রাধা ? রাধা কি পুরুষ ?
তাহলে আমার এই মন্দিরে আসাতে এমন কি অপরাধ হয়ে গেল ? এখন আমি এসেগেছি , আমি সামলে নেবো এই মন্দিরকে , তুমি তোমার রাস্তা দেখো পুরোহিত মশাই ...!
কৃষ্ণ ভক্ত মীরা ঠিকই বলেছিলেন ।জীবন যুদ্ধে যারা পলায়ন করে তাদের পরিনাম খুবই খারাপ হয়।
একদিন মীরাবাঈ কৃষ্ণপ্রেমে ডুবে গিয়ে একটি পদ গাইছিলেন।তাঁর গান শুনে এক সঙ্গীতজ্ঞের মনে হল যে মীরাবাঈ সঠিক রাগে পদটি গাইছেন না। ( এখানে "রাগ" বলতে উচ্চাঙ্গ সংগীত বোঝানো হয়েছে)।
তিনি তখন'ই মীরাবাঈকে থামিয়ে দিয়ে বলেন ,, মীরা !! তুমি সঠিক রাগে গাইছনা কিন্তু !!
তখন মীরাবাঈ বললেন ,,আমি রাগে নয় ,,অনুরাগে গাই।যদি আমি রাগে গাই তো শুধু এই জগতই আমার গান শুনতে পাবে, আর যদি অনুরাগে গাই, তো আমার কৃষ্ণ এই গান শুনতে পাবে।আমি জগতের জন্য নয় আমার শ্যামের সন্তুষ্টির জন্যই গাই।তা সে রাগে না হউক, কোন ক্ষতি নেই, কিন্তু তা অনুরাগে হউক।
উপরের এই পোষ্টটি দেওয়ার উদ্দেশ্য এটাই যে ,,কে কি বলছে না বলছে তাতে কর্নপাত করার প্রয়োজন নেই বলে আমি মনে করি।কেননা কারো কথায় যদি সবটা ভালো বা খারাপ হতো, তবে এই পৃথিবীটা হয়তো পুরোটাই স্বর্গ হয়ে যেত ,, নয়তো পুরোটাই নরকে পরিণত হতো।তাই ,,আমাদের শুধু সেটাই করা উচিত যা নিজের মনকে শুদ্ধ প্রেম-ভাবনার পথ দেখিয়ে আমাদের পরমাত্মার প্রতি অটল ভক্তি, বিশ্বাস আর ভরসার সম্পর্ক স্থাপন করে।
-----------------------------------------------------------------------------
পোস্টটি ভাল লাগে অবশ্যই স-কলকে শেয়ার করবেন।
প্রনিপাত
সদা সর্বদা শ্রী শ্রী রাধা ও কৃষ্ণের পাদপদ্মের কথা স্মরণ করুন, তাহলে শ্রীকৃষ্ণের দ্বারা আপনার জন্য বরাদ্দকৃত কার্য সম্পাদন করতে কোনও অসুবিধা অনুভব করতে হবে না।
জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে শ্রীকৃষ্ণের কৃপার প্রতি অগাধ বিশ্বাস ও ভরসা রাখতে হবে।
শ্রীকৃষ্ণের পবিত্র নামটিতে অসাধারণ আধ্যাত্মিক শক্তি রয়েছে কারণ শ্রীকৃষ্ণের নাম স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণের থেকে আলাদা নয় ....
ঐকান্তিক ভালবাসা এবং নিষ্ঠার সাথে এই নামগুলি জপ করুন তবেই আপনি চিণ্ময় আনন্দ অনুভব করবেন:
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে ...(১০৮ বার)
হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করুন এবং সুখী হন ...
1 মন্তব্যসমূহ